সীতাকুন্ড উপজেলায় আদিবাসী ত্রিপুরা গ্রামে সাম্প্রদায়িক হামলার সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদন

তদন্ত: ২৭ এপ্রিল ২০১৩

 চট্টগ্রাম জেলার সীতাকু- উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের সুলতানা মন্দির ত্রিপুরা পাড়ায় সাম্প্রদায়িক হামলার

ঘটনাস্থল সরেজমিন পরিদর্শনের উপর নাগরিক প্রতিনিধিদলের

প্রেস বিঞ্জপ্তি

ছোট কুমিরার কাছে সুলতানা জুটমিল। ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশেই এই সুলতানা জুটমিল থেকে প্রায় আধ কিলোমিটার রাস্তার রেল লাইন পর্যন্ত গাড়িতে যাওয়া যায়, বাকী রাস্তা পায়ে হেঁটে পৌঁছা যায় মসজিদা পাহাড় ত্রিপুরা পল্লী। পাড়াটি সুলতানা মন্দির ত্রিপুরা পাড়া নামে ও পরিচিত। রেল লাইন থেকে বৃক্ষহীন পাহাড়ের পাদ দেশে ২০/২২ টি কোনটি মাটির তৈরি গুদাম ঘর কোনটি বা শন বা টীনের ছাউনি বাঁশের বেড়া। রাস্তাহীন উচুঁ টীলার উপর ছোট্ট একটি কালি মন্দির।এই মন্দিরের অর্ধওয়ালে মাটির প্রলেপে কয়েকটি পোড়া ইট চোখে পড়লে ও আর কোথাও চোখে পড়েনি। ত্রিপুরা পাড়ায় প্রবেশ পথে চোখে পড়ে একটি সাইন বোর্ড। এতে লেখা আছে- এই জায়গার মালিক রফিকুল আলম চৌধুরী, জাহিদুল আলম চৌধুরী, মোবাইল: ০১৭১১-৪৩৩৭৪৬. পাড়ায় অনেক লোক, শিশু-কিশোর-যুবক মধ্য বয়োসী থেকে শুরু করে বৃদ্ধ নরনারী আমাদের আগমনের অপেক্ষায় রয়েছেন। গত ২৭ এপ্রিল ২০১৩ সকাল ১০.৩৪ ঘটিকায় আমরা উপস্থিত হই। প্রসঙ্গত, গেল ১৬ এপ্রিল ২০১৩, মঙ্গলবার,বিকাল আনুমানিক ৩.০ ঘটিকায় সালাউদ্দিন (২৮), নূরুদ্দিন (৩০), মো.রফিক (৩২), মো.জসিম সর্বপিতা মৃত-নুরুল ইসলাম, সঞ্জয় দাশ, পিতা- রায় মোহন দাশ, আবছার ও বাইট্ট্য আবছার সহ ৭/৮ জন উৎশৃঙ্খল যুবক কোথা থেকে মদ্য পান করে এসে ত্রিপুরা পাড়ায় ঢুকে কৃঞ্চ ধন ত্রিপুরা সহ আরো অনেকের কাছ থেকে মদ (পাগলা পানি) খুঁজতে থাকে। মদ দিতে না পারার অপরাধে সালাউদ্দিন গং ত্রিপুরা পাড়ায় হামলা চালায়। এতে মারাত্মক আহত হন-

১.       বাঁশি রাম ত্রিপুরা (২২),

২.       মোহন কুমার ত্রিপুরা,

৩.       লক্ষ্মী রাণী ত্রিপুরা (২০),

৪.       চম্পাবতি ত্রিপুরা (২২),

৫.       গণপতি ত্রিপুরা (১৯),

৬.       টাকি ধন ত্রিপুরা (৩০) ।

আহত ত্রিপুরা আদিবাসী মেয়েদের সাথে কথা বলে জানা যায় দুস্কৃতকারীরা মেয়েদের শ্লীলতাহানীর ও চেষ্টা করে। লক্ষ্মী রাণী ত্রিপুরার ৪ আনা ওজনের স্বর্ণের চেইন লুট করে। হামলার শিকার বাঁশি রাম ত্রিপুরা বাদী হয়ে সীতাকুন্ড মোডেল থানায় মামলা করেছেন। মামলা ধারা ১৪৩/৪৪৭/ ৪৪৮/৩২৩/ ৩২৫/৩০৭/ ৩৭৯/৩৮০/ ৪২৭/৫০৬ রুজু হয়েছে। থানা থেকে মামলা প্রত্যাহার করার জন্য সন্ত্রাসীরা হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। ঘটনা সরেজমিন পরিদর্শনের জন্য বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, চট্টগ্রাম অঞ্চল এর ব্যবস্থাপনায় এক প্রতিনিধিদল গতকাল ২৭ এপ্রিল ২০১৩ শনিবার ঘটনাস্থলে যায়। বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, চট্টগ্রাম অঞ্চলের আহবায়ক শ্রী শরৎ জ্যোতি চাকমার নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে উপস্থিত ছিলেন-

১.       এড. অজিত নারায়ণ অধিকারী, সাধারণ সম্পাদক, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা,

২.       দীপক চন্দ্র দে, সভাপতি, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ, সীতাকুন্ড উপজেলা,

৩.       জনাব মোক্তার আহমদ, সদস্য, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, চট্টগ্রাম;

৪.       জনাব কায়সার আলম, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ যুব মৈত্রী,

৫.       অধ্যাপক প্রদীপ চৌধুরী, মানবাধিকার কর্মী,

৬.       অনুরা চাকমা,

৭.       শাহাদাদ হোসেন, দৈনিক ডেইলি ষ্টার;

৮.      ধননজয় চাকমা, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ;

৯.       সঞ্জীব চন্দ্র দে, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রষ্টিান ঐক্য পরিষদ;

১০.     দীপক সাহা,

১১.     ডা.সুভাষ রায়,

১২.      দীপক গুহ,

১৩.     লক্ষ্মী ধন ত্রিপুরা,

১৪.      রবীন্দ্র ত্রিপুরা।

সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে প্রায় ১২টা পর্যন্ত প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং আহতদের ও পাড়ার মুরুব্বী, প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলেন। পরিদর্শনকালে আদিবাসীরা অভিযোগ করেন, আগামী ডিসেম্বর ২০১৩ এর মধ্যে জায়গা ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে মালিক। ত্রিপুরা আদিবাসীদের মারধর করে আবার আদিবাসীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। পরে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা সীতাকুন্ড উপজেলার নির্বাহী অফিসার জনাব শামীম এমরান মহোদয়ের সাথে দেখা করে ত্রিপুরা পল্লীতে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন এবং বসবাসরত ত্রিপুরা আদিবাসীদের পাড়ায় হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে উপযুক্ত শাস্তি প্রদানের দাবী জানান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব শামীম এমরান প্রতিনিধিদলকে ঘটনার সাথে জড়িতদের যথাযথ শাস্তির আশ্বাস দিয়ে বলেন, ত্রিপুরা উপজাতিরা সহজ সরল, তাদের নিজস্ব কোন ভূমি নেই। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তাদেরকে খাস জমিতে পুনর্বাসনের ব্যাবস্থা করা জরুরী হয়ে পড়েছে। তিনি আদিবাসীদের সর্বাত্মক সহযোগীতা প্রদান করার আশ্বাস দেন।

প্রতিনিধিদলের সদস্যরা এর পর সীতাকুন্ড মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জনাব মো: শামিউল আলম এর সাথে সাক্ষাৎ করে আদিবাসীদের জানমালের নিরাপত্তা বিধান, আদিবাসী পল্লীতে হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে যথাযথ শাস্তি প্রদানের আহবান জানান। আদিবাসী পল্লীতে হামলার এক সপ্তাহ পরও কোন আসামী গ্রেপ্তার হচ্ছে না, উল্টো ভিকটিমদের বিরুদ্ধে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত, চট্টগ্রামে সন্ত্রাসীদের মামলা দায়ের দেখে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা উদ্বেগ জানালে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শামিউল আসামী দ্রুত গ্রেপ্তারের আশ্বাস দেন এবং আদিবাসীদের কল্যাণে যাযা করণীয় তা তিনি করার প্রতিশ্রুতি দেন।

বার্তা প্রেরক,

(শরৎ জ্যোতি চাকমা)

আহবায়ক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, চট্টগ্রাম অঞ্চল।

তারিখ: ২৮ এপ্রিল ২০১৩